প্রভাকর : রাজনীতিতে আসার পূর্বে আপনি কি করতেন?
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : লেখাপড়ায় ছিলাম। ছাত্র রাজনীতি করেছি। ১৯৭৮-৮৯ সালে রাজনীতিতে আসার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও ব্যবসা শুরু করি।
প্রভাকর : রাজনীতিতে আপনি কেন আসলেন? কার অনুপ্রেরণায়?
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : আমি রাজনীতিতে এসেছি মূলত দেশ ও জনগণের সেবা করার জন্য। আমার বাবা পরোপকারী লোক ছিলেন। উনার আদর্শকে লালন করে আমি সর্বদাই মানুষের উপকার করতে চাইতাম। একসময় চিন্তা করলাম, ব্যাপকভাবে গণমানুষের উপকার করা যায় রাজনীতির মাধ্যমে। তাই রাজনীতিতে এসেছি। আর তৎকালীন এমপি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক মোস্তফা শহীদ সাহেবের অনুপ্রেরণায় আমি রাজনীতিতে এসেছি।
প্রভাকর : আপনার বর্ণাঢ্য রাজনীতি জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে বলুন।
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু আমার রাজনৈতিক জীবন। প্রথমে আমি চুনারুঘাট থানা ছাত্র লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। পরে থানা যুবলীগের সভাপতি হই। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘ ২৫ বছর। চুনারুঘাট সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি কয়েকবার। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছি দু’বার। বর্তমানে আমি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
প্রভাকর : উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে কি সফল মনে করেন?
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : সফলতা ও ব্যর্থতা বিচার করবে আমার জনগণ। সবসময় জনগণের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকতে চাই। তাহলেই নিজেকে সফল মনে হয়।
প্রভাকর : আপনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর উপজেলায় কী কী উন্নয়ন করেছেন?
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গিকার, ‘গ্রাম হবে শহর’। উনার প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে আমি মাননীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মোঃ মাহবুব আলী এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় চুনারুঘাট উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন করায় ব্রতী হয়েছি। বিশেষ করে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশি করে অনুদান দিয়েছি। কারণ- আমি বিশ্বাস করি, উপজেলার ছেলে-মেয়েরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলে চুনারুঘাট উপজেলা আলোকিত হবে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলার মসজিদ-মন্দিরে অনুদান দিয়েছি, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, বীজ-কালভার্ট করেছি, রাস্তায় রাস্তায় সৌর বাতি দিয়েছি, পানি সংকট নিরসনে টিউবওয়েল দিয়েছি, সৌর বিদ্যুত দিয়েছি, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছি, বয়স্ক ভাতা পেয়েছে উপজেলার বহু দরিদ্র মানুষ, শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অনুদান দিয়েছি। এছাড়াও অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে সর্বদা নিয়োজিত রয়েছি।
প্রভাকর : একজন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলাবাসীর প্রত্যাশা কি পূরণ করতে পেরেছেন? যদি পেরে থাকেন, তাহলে কিভাবে?
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি কি না, তা আমার চেয়ে প্রাণপ্রিয় উপজেলাবাসী ভালো বলতে পারবেন। তবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রভাকর : চুনারুঘাট উপজেলায় আর কী কী উন্নয়ন করার পরিকল্পনা আছে আপনার?
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে আমার। আমি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় চুনারুঘাটে একটা মিনি স্টেডিয়াম করতে চাই। খেলাধুলা আমি পছন্দ করি। নিজেও ফুটবলার ছিলাম। বিভাগীয় পর্যায়েও খেলেছি। দেহ, মনকে সতেজ রাখতে খেলাধুলার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে চুনারুঘাট উপজেলাকে আরো এগিয়ে নিতে চাই। শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ধরণের সহযোগিতা আমার পক্ষ থেকে থাকবে। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন করবো ইনশাআল্লাহ। যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করবো, খোয়াই নদীর উপর স্টিল ব্রিজকে প্রশস্থ করে পূর্ণাঙ্গ ব্রিজে রূপান্তর করার জন্য চেষ্টা করছি, মরা খোয়াই নদীতে একটি পার্ক করে দেয়ার কথা আমরা বলেছি প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী মহোদয়কে, নালমুখ ও সাঝ্যার গোদারাতে ব্রিজ করা পরিকল্পনা রয়েছে। চুনারুঘাট-সাটিয়াজুরি রাস্তা হয়েছে। চুনারুঘাট-কালেঙ্গা, চুনারুঘাট-রেমার রাস্তা শিঘ্রই হবে। স্থলবন্দরের কাজ চলছে, শেষ হলে বহু কর্মসংস্থান হবে। চুনারুঘাট উপজেলা আরো এগিয়ে যাবে। পরিশেষে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী মহোদয়ের আন্তরিকতায় চুনারুঘাট উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন করতে চাই।
প্রভাকর : জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। একথা কি বিশ্বাস করেন?
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : একথা চিরন্তন বাস্তব। জনগণের ক্ষমতা স্থায়ী। আমি এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
প্রভাকর : চুনারুঘাট উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবী, পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি’র সাথে কথা বলে কি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা আছে?
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মোঃ মাহববুব আলী মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রভাকর : আগামী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করার কি ইচ্ছা আছে আপনার?
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : গত নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ২৭ দিন আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। তারপরও জনগণ আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন ও আমায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন চাইলে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা আমায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিলে ইনশাআল্লাহ আগামী উপজেলা নির্বাচন করবো।
প্রভাকর : আপনার ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার সম্পর্কে বলুন।
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : আমি ব্যক্তিগত জীবনে সুখে-শান্তিতে আছি। আমার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় ছেলে জিল্লুল কাদির লস্কর রিমন একজন ব্যবসায়ী এবং হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক। ছোট ছেলে রিয়াজুল কাদির লস্কর মিঠু যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন বাংলাদেশ বিজনেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের নেতা। তিন মেয়ের স্বামীদের মধ্যে- একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, একজন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং একজন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার ছিলেন। ছোট মেয়ে মাহমুদা জাহান এনি লস্কর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
প্রভাকর : আমরা প্রত্যাশা করি, চুনারুঘাট উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন ও সর্বদা জনগণের কল্যাণ করবেন। ভালো ও সুস্থ থাকুন।
চেয়ারম্যান কাদির লস্কর : আপনিও সবসময় ভালো থাকবেন। দৈনিক প্রভাকর পরিবারের জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা নিরন্তর।